রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধ
যখন তুমি দুর্বল তখন শক্তির ভাব ধরবে,
যখন তুমি শক্তিশালী তখন দেখাবে দুর্বলতা !
তোমার পরিকল্পনা থাকবে অন্ধকারে ঢাকা,
যখন আক্রমণ করবে,
তা যেন হঠাৎ বর্জ্যপাতের মত দেখায়!
-
প্রাচীন চীনা যুদ্ধ বিশারদ মান জু
রাশিয়া- ইউক্রেনের সংঘাতের মূল কারণ:
নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, রাশিয়া ইউক্রেনের সংঘাতের মূল বিষয় নেটো ।
নেটো হল আমেরিকান নেতৃত্বাধীন 30 টি দেশের একটি জোট যা ১৯৪৯ সালের 14 এপ্রিল 12 টি দেশ নিয়ে গঠিত হয়।
আমেরিকান নেতৃত্বাধীন সাবেক পুঁজিবাদী ব্লকের শক্তি ন্যাটো, অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক ব্লকের হাতে এরকম কোন শক্তি আপাতত নেই( সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ওয়ারশ চুক্তি ছিল যা 1991 সালে বিলুপ্ত হয়)
ইতোমধ্যে সাবেক সোভিয়েত বুলগেরিয়া এস্তোনিয়া লাটভিয়া লিথুয়ানিয়া রোমানিয়া এবং স্লোভাকিয়া ন্যাটোর সদস্য হয়ে গেছে। 2014 সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর ইউক্রেন চালাচ্ছে মার্কিন পন্থী সরকার।
অপরদিকে ইউক্রেনও চাচ্ছে ন্যাটোর জোটে যোগ দিতে। রাশিয়ার আপত্তি হলো ইউক্রেন যদি ন্যাটো জোট এ যোগ দেয়, তা হলে রাশিয়ার সীমানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলে আসবে যার ফলে রাশিয়া নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।
যুদ্ধের শুরু:
23 ফেব্রুয়ারি 2022 এর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুইটি অঞ্চল জেনেটক্স
এবং লুহানস্ক কে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপরই 24 ফেব্রুয়ারি 2022 ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া।
রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের সামরিক শক্তি:
- বিশ্বের সামরিক শক্তির দিক দিয়ে রাশিয়া এখন দ্বিতীয় নম্বর পজিশনে রয়েছে, অপরদিকে রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের অবস্থান 22 তম।
- রাশিয়ার রয়েছে সক্রিয় সেনা 8 লাখ প্রায়, অন্যদিকে ইউক্রেনের রয়েছে মাত্র দুই লাখ সেনা সদস্য।
- রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেট 15 হাজার 400 কোটি, অন্যদিকে ইউক্রেনের বাজেট 1127 কোটি ।
- রাশিয়ার ট্যাংক রয়েছে 12000, অপরদিকে ইউক্রেনের রয়েছে মাত্র 3000
- রাশিয়ার জঙ্গী বিমানের সংখ্যা 1500, অপরদিকে ইউক্রেনের জঙ্গী বিমানের সংখ্যা মাত্র 100।
- রাশিয়ার যুদ্ধ বিমান রয়েছে 1511, অন্যদিকে ইউক্রেনের রয়েছে 98 টি
- রাশিয়ার সংরক্ষিত সেনা সংখ্যা 20 লক্ষ, অপরদিকে ইউক্রেনের মাত্র 9 লক্ষ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের উপর প্রভাব:
তৈরি পোশাক খাতের উপর প্রভাব:
বিজিএমই এর বিজিএমইএর সভাপতি শহিদুল শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, পোশাকের নতুন বড়বাজার রাশিয়া, এই যুদ্ধের ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে্।
জ্বালানির ক্ষেত্রে প্রভাব:
এই যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে।
ভোজ্য তেলের সংকট:
বাংলাদেশের চলমান ভোজ্যতেলের সঙ্কট আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
খাদ্যনিরাপত্তার উপর প্রভাব:
বিশ্বের গম আমদানির বড় অংশই হয়ে থাকে রাশিয়া-ইউক্রেন ও বেলারুশ থেকে
এই যুদ্ধের ফলে আমদানি- আমদানি-রপ্তানি বিঘ্নিত হবে যার ফলে খাদ্য খাদ্যনিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়বে।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের উপর প্রভাব:
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প উদ্বোধন এবং পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মূল্যস্ফীতি:
এই যুদ্ধের ফলে মূল্যস্ফীতির প্রবণতা বেড়ে যাবে।
ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের নিরাপত্তা শঙ্কা:
এই যুদ্ধের ফলে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট 2 উপর প্রভাব:
বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট 2 এর বিষয়ে রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে
এ যুদ্ধের ফলে এর কার্যক্রম বিলম্বিত হতে পারে।
অর্থনৈতিক মন্দা:
এই যুদ্ধে যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হবে যার প্রভাব বাংলাদেশেও করবে।
সামরিক ক্ষেত্রের উপর প্রভাব:
এই যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের সামরিক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বের চাপ:
বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের চাপ বাড়তে পারে।
সোনার দামের উপর প্রভাব:
বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধি পাবে যার প্রভাব আমাদের দেশে পড়বে।
অর্থনীতিবিদ এবং কূটনীতিকরা বলেছেন খুব তাড়াতাড়ি হয়তো রাশিয়া সংকটে বড় প্রভাব বাংলাদেশে দৃশ্যমান হবে না। কিন্তু এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার আরো বাড়লে বাংলাদেশ কি করবে, বাংলা সেই আগাম পরিকল্পনা নিয়ে রাখতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ