আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভাল আছেন।আল্লাহর অশেষ রহমতে আমিও ভাল আছি।আজ আমি আপনাদের সামনে আমার বিমান বাহিনীতে চাকরি পাওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে এসেছি।
আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে গ্রাম্য স্কুল পড়তাম। প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় আমাকে স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে ক্ষেতে কাজ করতে হত। আমরা চার ভাই আমি ছিলাম ৩ নম্বর। বড় দুই ভাই ইতঃমধ্যে দারিদ্র্যতার কাছে হার মেনে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি আছি আমি। আমারও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু আমি স্কুলে মোটামুটি ভাল ছাত্র ছিলাম তাই শত কষ্ট হলেও আমার বাবা মা আমার পড়াশোনা চালিয়ে গেলেন।যায় হোক কষ্টের কথা আর শেয়ার করব না। যদি করি তাহলে আর শেষ হবে না।প্রাইমারী স্কুল থেকে হাই স্কুলে উঠলাম।
দেখতে দেখতে এস এস সি পরীক্ষা চলে আসল।টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। আমি ফাস্ট হয়েছি কিন্তু একটা অনিশ্চিত জীবন ফরম ফিল আপ করতে পারব তো? আমাদের সময় ফরম ফিল আপ করতে ১৮০০ টাকা লাগল।বাবাকে গিয়ে বললাম কিন্তু বাবা কি করে দিবে এত গুলো টাকা একবারে। সেদিন বাবার উপর রাগ হলেও বুঝেছিলাম আসলে তো একবারে এত গুলো টাকা দেওয়া সম্ভব না। যায় হোক এই দিকে ফরম ফিল আপের ডেট প্রায় শেষ আমার টাকা যোগাড় হয় নাই। বাধ্য হয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কে বললাম তিনি কমিয়ে ১১০০ টাকা করল। বাবা কে এসে বললাম তিনি ও মা কোথায় থেকে দিয়েছেন টাকা গুলো আজ আমার মনে নেয়। যথাসময়ে ফরম ফিল আপ করলাম এবং পরীক্ষা দিয়ে আল্লাহর রহমতে এ+ পেলাম। এ+ পেয়েও অনিশ্চয়তা কলেজে ভর্তি বই কেনা কোথায় পাব টাকা বাবা কে বললে বলে এত টাকা দেওয়ার নাই তুমি গ্রামের কলেজে Arts এ ভর্তি হয়ে যাও।গ্রামে বিজ্ঞানের কোন কলেজ নেয় আছে শহরে সেখানে ভর্তি হওয়া বই কেনা মেসে থেকে পড়াশোনা এসব শুধু কল্পনা ছাড়া কিছুই না আমি ছোট মানুষ কি করতে পারি তাই রাগ করে কাউকে না বলে ঢাকা শহরে চলে আসলাম।
ভাবলাম ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি নিব আমাদের গ্রামের অনেক ছেলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে তাই আমিও নিতে পারব।যেই কথা সেই কাজ চলে আসলাম ঢাকায় আর পড়াশোনা বাদ দিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি জীবন শুরু হল। ৬ মাস পর আমার সাথে চাকরি করে এমন একজন একটা পত্রিকা নিয়ে এসে বলল বিমান বাহিনী তে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।যা যা চেয়েছে আমার সব কিছুই আছে। কিন্ত হতাশ হয়ে গেলাম আমার চাকরি হবে না। টাকা ছাড়া কি আর চাকরি হবে।
তারপরও ভাবলাম ঢাকায় তো আছি চেষ্টা করে দেখি। গেলাম পুরাতন বিমান বন্দর, তেজগাঁও। ফর্ম নিয়ে আসলাম। পুরণ করে যথা সময়ে জমা দিলাম। আমাদের জেলার তারিখ ছিল ২৩ জুন ২০১২ সাল। সকাল ৮ ঘটিকার সময় উপস্থিত হয়ে দেখলাম এত প্রতিযোগী আমার দ্বারা হবে না। একবার ভাবলাম চলে আসি।কিছু অভিভাবক এসেছে আর তাদের নিজেদের মধ্যে গল্প করছে যোগাযোগ করে এসেছে অমুক তমুক এর সাথে কথা হয়েছে তাদের ছেলের চাকরি সিউর।এই সব কথা শুনে হতা্শ হয়ে গেলাম।
যায় হোক এর মধ্যে জেলা অনুযায়ী ডাক পড়ল ভিতরে নিয়ে গেল একটা পরীক্ষার হল রুমে। IQ পরীক্ষা দিয়ে নিজের মধ্যে ভাল লাগছে। অনেক ভাল পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু তাতে লাভ কি চাকরী তো আর পাব না। দুপুরের বিরতি দিয়ে বলল বিকালে রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে। তাই বসে থাকলাম দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি কারণ আমি টাকা দিয়ে যায় নাই। না খেয়ে বিকাল ৪ টা পযন্ত অপেক্ষা করার পর মাইকে রেজাল্ট ঘোষণা করে এক এক করে ভিতরে নিচ্ছি। প্রায় ৩০ জনকে ডাকল আমার নাম নাই।ভাবলান আমার নাম নাই।কিন্তু হটাৎ আমার রোল নম্বর ধরে ডাক দিল। আনন্দে আত্মাহারে হয়ে ভিতরে গেলাম। যদিও জানি এটাই চাকরী না। ভিতরে আবার ক্লাস রুমে বসিয়ে রাখল এবং একজন সিনিয়র অফিসার এসে বলল তোমাদের আগামীকাল মেডিকেল হবে। সেদিনের মত চলে আসলাম এবং আগামীকাল এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
পরের দিন সকাল ৮ টায় উউপস্থিত হয়ে ৯ টার দিকে আমাদের মেডিকেল শুরু হয়ে গেল। আল্লাহর রহমতে মেডিকেলে উত্তিন্ন হলাম ৩৪ জনের মধ্যে আমরা ১৪ জন অবশিষ্ট থাকলাম বাকিদের বাদ দিয়ে দিছে। মেডিকেলে কি কি করা হয় তা অন্য একদিন লেখব।যায় হোক মেডিকেলে টিকার পর নিজের প্রতি একটা আস্থা কাজ করছে।
মেডিকেলের পর আবার একটা লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হল যদিও খুব সহজ একটা বিষয়ের উপর লিখতে বলা হল সময় ছিল ৩০ মিনিট। যায় হোক ভাল ভাবে দিলাম এবং ১ ঘন্টার মধ্যে রে?রেজাল্ট দেওয়া হল। মোটামুটি সবাই পাশবকরেছে তবে ৩ জনকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।থাকলাম ১১ জন সারাদিন না খেয়ে দ্বিতীয় দিন পার করলাম আর ৩য় দিন নাকি ভাইবা নিবে কিন্তু আমার ফরমাল কোন ড্রেস নাই আর কেনার মত টাকাও নাই।
আব্বাকে সব জানালাম খুশি হল কিন্তু ড্রেস কিনতে হবে শুনে মন খারাপ করল।আমিও আর কাউকে কিছু বললাম না। এতদূর এসেছি এটাই পাওয়া এখন বাদ পড়লে কিছু করার নাই।আমার যা আছে তাই পড়ে যাব। আমার একটা সাদা শার্ট আর একটা পুরনো প্যান্ট ছিল আর একজনের পুরাতন একটা সু পড়ে চলে আসলাম। ভাইবা দিব বসে আছি কিন্তু আমি সবসময় পড়ে আছি আমার ড্রেসের ভাবনায়।নিজের কাছে ছোট মনে হচ্ছে বারবার।ভিতর এ ঢুকলাম ভাব্লাম আমাকে ড্রেস নিয়ে কিছু একটা বলবেন।
স্যার আমার ড্রেস দেখল কিন্তু কিছু না বললেও বুঝতে পারলাম ওনি ভাল ভাবে নিচ্ছেন না।আমার নাম পরিবার বাবা মা কি করেন আমার রেজাল্ট ভাল এই চাকরি কেন করব এই সব প্রশ্ন করল।আর শেষে আমাকে বলল আমাদের বাহিনীতে আমরা স্মার্ট অফিসার নিয়োগ দিয়ে থাকি। এই বলে বলল তুমি আসতে পার।আমিও সালাম দিয়ে চলে আসলাম। সবার ভাইবা শেষ করে ব্রিফ দিল যে যাদের চাকরি হবে তাদেরকে ফোন করে ফাইনাল মেডিকেলের জন্য ডাকা হবে আর যাদের কল দেওয়া হবে না তাদেরকে আসার দরকার নাই।চলে আসলাম এবং আগের মত গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করলাম৷ ৪ দিন পর আমার নম্বরে কল আসে টিএন্ডটি নম্বরে এবং আমাকে জানান হয় যে আগামীকাল সকাল ৮ টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে মেডিকেলের জন্য।
মেডিকেল শেষ হল ট্রেনিং শেষ হল আর চাকরি জীবনের ৮ বছর শেষ হল। আল্লাহর রহমতে বাবা মা ভাই বোন নিয়ে সুখেই আছি এখন।
আপনি চাইলে নিচের দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এপসটি ডাউনলোড করে লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন । এপসটি তে আপনি ডিফেন্স নিয়োগ সম্পর্েক বিস্তারিত জানতে পারবেন্👇👇👇👇 https://drive.google.com/file/d/1RyIHqnOmDk84YF1hhuG0USlxIAXIy02z/view?usp=drivesdk
এখান থেকে ডাউনলোড করতে না পারলে whatsapp এ যোগাযোগ করুন : 01776624515
আমার কঠিন জার্নি টা হয়তো ভাল ভাবে শেয়ার করতে পারি নাই কিন্তু আমার দ্বারা যেটা অসম্ভব ছিল সেটা আল্লাহু সহজ করে দিয়েছে।তাই আপনারা যারা বিমান বাহিনী বা অন্য ডিফেন্স এর জবের জন্য ট্রাই করতছেন আপনাদের জন্য একটা পরামর্শ আপনি হাল ছাড়বেন না কখনো । আপনি পারবেন। আপনাকে পারতে হবে হাজার বাধা আসবে সেগুলো উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে।মনে রাখবেন আপনার সাফল্য আপনার পরিবারের সাফল্য।
আজ এ পযন্ত আবার একদিন কোন একটা বিষয় নিয়ে হাজির হবে।আর আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে আপ্রেন আমাদের ফেসবুক পেজেও ফলো করে রাখুন আপডেট পেতে।
0 মন্তব্যসমূহ